শনিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
ProdhanKhabor | Popular NewsPaper of Bangladesh
শনিবার ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৫ ১০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম :
দাউদকান্দিতে বহুমূখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন দাউদকান্দিতে মোটরসাইকেল না পেয়ে ৯ম শ্রেনির শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা ১৯ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ ফাউন্ডেশনের ইসলামিক কনসার্ট দাউদকান্দিতে প্রকাশ্যে শিক্ষককে মারধর করলো বখাটে পাঁচগাছিয়া ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি দাউদকান্দির পাঁচভিটা যুবসমাজের উদ্যোগে ইসলামী সংস্কৃতি ও ক্রিড়া প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণ কুমিল্লা রিপোর্টার্স ইউনিটির কমিটিতে সেলিম রেজা সভাপতি, সিরাজুল ইসলাম সম্পাদক মির্জা ফখরুলের আসনে জামায়াতের প্রার্থী হলেন শিবিরের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার হোসেন দাউদকান্দিতে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান ও সংবর্ধণা তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাউদকান্দিতে বৃদ্ধকে কুপিয়ে হত্যা গ্রেফতার দুই মাদক ব্যবসা ছিনতাই ও ডাকাতির প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ অন্যায়কারীদের এখন পর্যন্ত বিচারের আওতায় আনা হয়নি: ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ইসলামী ব্যাংক দাউদকান্দি শাখার উদ্যোগে কম্বল বিতরণ মেলায় পাওয়া যাচ্ছে শেকড় সন্ধানী লেখক ও সাংবাদিক শরীফ প্রধানের ‘শিক্ষানবিশ সাংবাদিকতা’ বই দুর্নীতি ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় প্রধান অন্তরায় জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চাই: ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন দাউদকান্দিতে রিফাত হত্যাকান্ডের আসামী দিলবারকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ দাউদকান্দিতে অবৈধ গ্যাস লাইন অপসারণ ও সংযোগ বিচ্ছিন্ন মেধার বিকাশ সংগঠনের উদ্যোগে বৃত্তি প্রদান জনগণ ভোটের অধিকার পায়নি: অধ্যাপক মুজিবুর রহমান
স্মৃতিমাখা কাউয়াদি মাদরাসা

"শৈশবের আনন্দমূখর সময় কেটেছ যেখানে"

"শৈশবের আনন্দমূখর সময় কেটেছ যেখানে"
প্রথম ছবিটির পিছনে কয়েকটি গাছ দেখা যাচ্ছে। গাছগুলো তখন আরো চিকন ও ছোট ছিলো। সিঁড়ি বেয়ে দো'তলার ছাঁদে উঠতাম। আর এই গাছগুলো বেয়ে নিচে নামতাম। কখনো কখনো গাছ দিয়ে উঠতাম আবার নামতাম। এই নিয়ে হতো প্রতিযোগিতা। এখানে যখন আসতাম এটাই ছিলো আমাদের খেলার প্রধান আকর্ষন। সকাল, ভরদুপুর ও পুরো বিকেল যেন কাটতো এখানেই।

প্রতি বছরে এখানে ওরশ হতো। রাতভর ওয়াজ, জিকির আজগার হতো। মা' আমাদেরকে নিয়ে আসতেন। ওরুসকে কেন্দ্র করে অনেক লোকজনের সমাগম ঘটতো। ওরশে আগত মুসুল্লিদের জন্য বড় বড় ঢেকে খিচুড়ি রান্না হতো। মহিষ কুরবানী করতো। অনেক ভ্রাম্যমান দোকান বসতো। রাতভর ওয়াজ শেষে বাদ ফজর তাবারুক বিতরণ করতো। রাতে ঘুমিয়ে সকালে দৌড়ে আসতাম। কখনো আবারা মামারা বাড়িতে নিয়ে যেতো দাবারুক।

এখানে আসলে আনিছ, নয়ন ও নাছিম (খালাত ভাই) শিশিরকে (মামাতে ভাই) প্রায়ই তাঁদের পেতাম। ওদের সাথে শৈশবে অনেক খেলা করেছি। শিরিন ও আইরিন (খালা), সুমি (খালাতো বোন), তারু, কামরুল, বারেক, সবুজ, ফেরদাউস, মহিউদ্দিন (মামা) ওনারা আমার বড় ছিলো। কিন্তু ওনাদের সাথে অনেক সময় কেটেছে।

এখনকার পুরো যুবতী হ্যাপী (সমবয়সী), রুমি ও সোনিয়া (খালাতো বোন) অনেক ছোট ছিলো। আমার পিছনে পিছনে ঘুরতো নানা বাড়ীর পুকুর পাড়ে অনেক গাছ-গাছালি ছিলো, আম, তাল ও গাব গাছ ছিলো আমাদের নিকট প্রিয়। এখনও আছে। তবে, আগের মতো নেই।

বছরের এমন দিনে গাব গাছগুলোতে গাব' পেঁকে হলুদ হয়ে থাকতো। পাতার ভাজে ভাজে থাকতো পাকা গাব। সেখান থেকে খুঁজে খুঁজে বের করতাম। গাছের নিচে বসেই খেতাম। আবার কাঁচা-পাঁকা আমের ভর্তা বানাতাম।

বলছি, আমার মামার বাড়ীর কথা। দাউদকান্দি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের পূর্বকাউয়াদি গ্রাম আমার মামার বাড়ি। কাউয়াদি মাদরাসার গাঁঘেঁষে পশ্চিম উত্তর কর্নারের বাড়িটি আমার মামার বাড়ি।

ওই বাড়ীতেই আমার জন্ম। বাড়িটির নাম' শুরুতে "ছায়েদ আলী বেপারীবাড়ী" নামে পরিচিতি থাকলেও বিভিন্ন সময়ে এই বংশের কৃতি ব্যক্তিদের নামে নামকরণ ও পরিচিতি লাভ করে বাড়িটি। সময়ে সময়ে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে পরিচিতি পায় এই বাড়ী।

যেমন, মরহুম মাওলানা আব্দুল হামিদ নোমানী নজমে (মাওলান সাবের বাড়ী), মরহুম প্রফেসর একেএম আব্দুল হক'র নামে (হক সাহেবের বাড়ী), আব্দুল মমিন মেম্বার-এর নামে (মমিন মেম্বারের বাড়ী) ও মো. হেলাল ইসহাক, সাবেক চেয়ারম্যানের নামে (চেয়ারম্যান বাড়ী) এই সকল ব্যক্তি তাঁদের স্বীয় কর্মগুনে সমাজে সন্মান ও মানুষের ভালোবাসা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বাড়িটি চেয়ারম্যান বাড়ি হেসেবে ব্যাপক পরিচিত।

মাওলানা আব্দুল হামিদ নোমানী। সুজাতপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মাওলানা ছিলেন। এবং দৌলতপুর ইউনিয়নে চেয়ারম্যান নির্বাচনে অংশগ্রহন করেন এছাড়াও ওনার রাজনৈতিক ও সামাজিক গুনাবলী ছিলো।

মরহুম প্রফেসর একেএম আব্দুল হক। (আমার বড় মামা)। ঢাকা সিটি কলেজের রাষ্ট্র বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ছিলো। তিনি অল্প সময়ে উচ্চ শিক্ষা অর্জন শেষে শিক্ষকতা পেশায় নিয়োজিত হন। এবং ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। এবং অল্প বয়সেই তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

আব্দুল মমিন মেম্বার। প্রফেসর একেএম আব্দুল হক সাহেবের ছোট ভাই। নির্বাচীত মেম্বার ছিলেন। গ্রামীন দরবারে একজন চৌকশ ও তীক্ষ্ণ জ্ঞানের অধিকারী ও গুনী দরবারি হিসেবে বিভিন্ন গ্রামে তাঁর সু-নাম শোনা যায়। তিনি বর্তমানে এই বংশের মুরুব্বী।

মো. হেলাল ইসহাক চেয়ারম্যান। মাওলানা আব্দুল হামিদ নোমানীর বড় ছেলে। হেলাল ইসহাক একজন রাজনৈতিক, দৌলতপুর ইউনিয়নের নির্বাচীত চেয়ারম্যান ছিলো। তাঁর সময়ে ইউনিয়নে ব্যাপক উন্নয়ন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটে। তিঁনি বর্তমানে একজন ব্যবসায়ী ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন।

নানা বাড়ীর নানাদের চেয়ে আমার সম্পর্ক ছিলো নানুদের সাথে বেশি। কয়েকজন নানাকে পেলেও তাঁদের সাথে তেমন সখ্যতা গড়ে উঠেনি। নানিদের সাথে আমার ঘনিষ্ঠতা ছিলো চরমে। নানিদের নিজস্ব নামের বাহিরে একটা নাম ছিলো, সেই নামে ডেকেও মজা করতাম।

নামগুলো হলো (রুনুর মা, শাজানের মা, মোশার মা, হতুর মা, ইউসুবের মা, রুশুর মা, কাশেমের মা ও রফিকের মা)। আমি মুরুব্বীদের মুখে শোনে তাদেরকে এই নামে ডাকতাম নানীরা অনেক সময় আমার উপর খেপে যেতো। নানাদের মধ্যে কেহই বেঁচে নেই।

নানিদের মধ্যে মোশার' মা ব্যতিত সকলেই আছে। কিন্তু আগের মতো আর দেখা হয় না। কারন, আমি আগের মতো এখন আর নানি বাড়ী যাই না। তাই, তেমন দেখাও হয় না।

শফিক মামা। নারায়নগঞ্জ জব করে। বুধবার সকালে কল দিয়ে বলে, বাগিনা কই আছত? বললাম, বাড়ি আছি। মামা বললো, আমি আসতেছি। বুধবার আমাদের বাড়িতে (কাদিয়ারভাঙ্গা) থেকে বৃহস্পতিবার দু'জনে কাউয়াদি যাই। সেখান থেকে সন্ধ্যায় আমি চলে আসি বাড়িতে। মামা থেকে যায়।

গতকাল শুক্রবার মামা আবার বললো, চলে আস। আমি জুম্মার নামাজ গিয়ে পড়ি কাউয়াদি মাদরাসায়। দুপুরের খাবার শেষে মামাকে বললাম। মামা চলেন, পুরো বাড়িটি ঘুরে দেখি। অনেকদিন ঘুরিনা।

প্রথমেই চেয়ারম্যানের বাড়ি দিয়ে প্রবেশ করি। বাড়িতে গিয়ে চেয়ারম্যানের মাকে ডাকি, অনেক বছর দেখা নেই। নানি আবার অনেক আদর করতো আমাকে। খোঁজ-খবর নিতো। আমার আওয়াজ শোনে বের হয়ে আসে। জড়িয়ে ধরি। অনেক আলাপ হয়। বয়সের ভাড়ে সে আগের মতো নেই।

কথার ফাঁকে, নানি বললো, ভাই, গাব খাবি? বসো। এইটা বলে কতগুলো পাকাগাব নিয়ে এলো। আমি, মামা আর অপু খেলাম। পরে দোয়া চেয়ে বিদায় নিলাম। মামাকে বললাম, চলেন পুকুরের পশ্চিম দিকে যাই। মজার বিষয় হলো, মামাদের বাড়ির পুকুর পাড়গুলো হলো একেকটা বাড়ির মতো চওড়া।

পশ্চিম পাড়ে গিয়ে অনেক গাছ ও স্মৃতি মাখা সময়ের কথা স্মরণ করি। ওখানে চেয়ারম্যান মামার মায়ের একটা তাল গাছ ছিলো তাল চুরি করে খেয়েছিলাম, আমি আর শিশির। সেই পুকুর পাড়ে নানা বাড়ীর অনেক মুরুব্বীদের কবর রয়েছে। প্রফেসর একেএম আব্দুল হক সাহেবের কবরও সেখানে। আমি কবরের সামনে গিয়ে মনে মনে দোয়া করলাম। সেখান থেকে হেঁটে পুরো বাড়ি ঘুরে মাদরাসায় এসে পৌছলাম।

আসরের নামাজ শেষে মাদরাসার মাঠে বসলাম। গাছগুলোকে দেখেই স্মৃতিতে হারালাম। এখন কত ভবন হয়েছে। সে সময় অল্প একটু মাঠ ছিলো। সামনে ছোট পুকুর ছিলো। মামার সাথে এই নিয়ে গল্প শুরু হলো। আগে মাদরাসা ছোট ছিলো, রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ ছিলো না।

অনেক ছাত্র ছিলো, শিক্ষার মান ছিলো, ছাত্রদের মাঝে সুন্নাত ও আমল ছিলো। এখন অনেক আধুনিক হয়েছে। পাকা সড়ক, নতুন ভবন, বিদ্যুৎ সবই আছে। কিন্তু আগের মতো ছাত্র নেই। যে ক'জন আছে' তেমন আমলও নেই। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ছবিগুলো ধারন করেছে ছোট (মামাতো ভাই) মুশফিকুর রহমান অপু। অপুকে ধন্যবাদ জানাই।

নানা বাড়ীর পুকুর পাড়ের সেই আমগাছ ও গাবগাছ এখনো আছে আগের মতোই। কাউয়াদি মাদরাসার পরিবর্তনের সাথে পরিবর্তন হয়েছে আমারও। শৈশবের স্মৃতি মাখা সময়ের সঙ্গী কামরুল মামাসহ অনেকেই নেই পৃথিবীতে। চেনা-জানা অতি আপনজন অনেকেই হয়েছে কবরবাসী।

যাঁদের অনেকের সাথে দেখা ও কথা হয়েছিলো আমার। ভালো থাকুক মামা বাড়ীর সকলে। আত্মীয়তার বন্ধন অটুট থাকুক প্রতিটি পরিবারে। মহান আল্লাহ আমার নানা-নানু, মামাসহ সকলকে আপনার সু-শীতল জান্নাতের অধিবাসী করুন, সেই দোয়া করি। আমিন।

লেখক:
মো. শরীফুল ইসলাম (শরীফ প্রধান) লেখক, সাংবাদিক, সংগঠক ও সম্পাদক- প্রধান খবর 01675785122, [email protected]

পিকে/এসপি।
দাউদকান্দিতে বহুমূখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন

দাউদকান্দিতে বহুমূখী কারিগরি প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন